নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করাে। Class 10 | Geography | 5 Marks
উত্তর:-
নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপসমূহ : উৎস থেকে মােহানা পর্যন্ত নদী তার গতিপথে তিনটি কাজ করে—ক্ষয়, বহন এবং সঞ্জয়। এগুলির মধ্যে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরূপ গঠিত হয় সেগুলি হল—
1. ‘I’ আকৃতির উপত্যকা বা ক্যানিয়ন:
উৎপত্তি : শুষ্ক ও প্রায়শুষ্ক পার্বত্য অঞলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে ‘I’-আকৃতির নদী উপত্যকা বা ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয়। কারণ, বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য নদী উপত্যকাগুলির পার্শ্বদেশের বিস্তার কম, কিন্তু ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীগুলির নিম্নক্ষয় বেশি হয়। এজন্য নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতাে দেখতে হয়। শুষ্ক ও প্রায়শুষ্ক পার্বত্য অঞলে সংকীর্ণ ও গভীর ‘I’-আকৃতির উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বলা হয়।
উদাহরণ : কলােরাডাে নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (গভীরতা প্রায় 1857 মি)।

2. ‘V’ আকতির উপত্যকা বা গিরিখাত :
উৎপত্তি : আর্দ্র ও আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নদীর উচ্চ বা পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল বেশি থাকায় নদীগুলি প্রবলভাবে নিম্নক্ষয় করে। এরূপ নিম্নক্ষয়ের কারণে নদী উপত্যকাগুলি যেমন সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ওঠে তেমনই আবহবিকার পুঞ্জিতক্ষয় ইত্যাদির প্রভাবে কিছু পরিমাণ পার্শ্বক্ষয়ও চলে। ফলে নদী উপত্যকা আগের থেকে চওড়া হয়ে ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতাে আকৃতি ধারণ করে। অতিগভীর ‘V’ -আকৃতির এই উপত্যকাকে বলা হয় গিরিখাত।
উদাহরণ : নেপালের কালী নদীর গিরিখাত।

3. জলপ্রপাত :
উৎপত্তি : নদীর জলপ্রবাহ যখন হঠাৎ কোনাে উচ্চস্থান থেকে নীচের দিকে লাফিয়ে পড়ে,তখন তাকে জলপ্রপাত বলে। নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর ওপরে নীচে আড়াআড়িভাবে বা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে, প্রবল স্রোতে ওপরের কঠিন শিলাস্তর ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়ার ফলে নীচের কোমল শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে। কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বলে, সেখানে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয় এবং নদীস্রোত খাড়া ঢাল থেকে প্রবল বেগে নীচে আছড়ে পড়ে জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: ভেনেজুয়েলার ক্যারােনি (Caroni) নদীর উপনদী চুরান (Churun) নদীর গতিপথে সৃষ্ট অ্যাঞ্জেল প্রপাতটি পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।

4. প্রপাতকূপ বা প্লাঞ্জপুল :
উৎপত্তি: জলপ্রপাতের নীচের অংশে জলের গতিবেগ ও শক্তি খুব বেশি থাকে। এজন্য জল যেখানে নীচে পড়ে, নদীখাতের সেই অংশে জলের আঘাতে এবং নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে বেশ বড়াে গর্ত সৃষ্টি হয়। হাঁড়ির মতাে দেখতে সেই গর্তকে বলে প্রপাতকূপ বা প্লাঞ্জপুল।
উদাহরণ : মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারিতে লিটল ফল জলপ্রপাতের নীচে প্রপাতকূপ আছে।

5. মন্থকূপ বা পটহােল :
উৎপত্তি: উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি প্রভৃতি ঘুরতে ঘুরতে নীচের দিকে অগ্রসর হয়। এর ফলে পরিবাহিত নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ডের দ্বারা ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ের কারণে নদীখাতে কূপের মতাে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়। এগুলিকে বলা হয় মন্থকূপ বা পটহােল।
উদাহরণ: তিস্তা নদীর পার্বত্য প্রবাহে অনেক মন্থকূপ দেখা যায়।

6. শৃঙ্খলিত শৈলশিরা :
উৎপত্তি: পার্বত্য অঞ্চলে কঠিন শিলাগঠিত শৈলশিরাসমূহ নদীর গতিপথে অনেকসময় এমন বাধার সৃষ্টি করে যে, সেই বাধা এড়াতে নদী শৈলশিরাগুলির পাদদেশ ক্ষয় করে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। তখন পরপর অবস্থিত ওই শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে শৃঙ্খলিত বা আবদ্ধ দেখায়। ফলে দূরথেকে দেখলে মনে হয় নদী ওই শৈলশিরাগুলির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ওই শৈলশিরাগুলিকেই শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বলে।
উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং হিমালয়ে শৃঙ্খলিত শৈলশিরা দেখা যায়।

Read Also:
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের চিত্রসহ বর্ণনা দাও।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের প্রভাব কোথায় সর্বাপেক্ষা বেশি?
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।
নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করাে।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করাে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।