বিশ্ব উষ্ণায়ন
ভূমিকা : পৃথিবীর সামনে আজ ঘাের বিপদ। পৃথিবী আজ ভালাে নেই। বিশ্বপরিবেশ আজ গভীর সংকটের মুখে। আমাদের এই প্রিয় পৃথিবীটি আমাদের সকলকে নিয়ে যুগযুগান্তর ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে পরম শান্তিতে চলছিল। সেই পৃথিবী আজ পড়ে গেছে ভয়ংকর এক সংকটের মুখে। এর কারণ পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে।
উষ্ণায়নের পরিমাণ :বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা উদবিগ্ন। তারা দেখছেন, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই শতাব্দীতে আরও ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬.৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা। বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন ১.৫ থেকে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই পৃথিবীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির জীবন বিপন্ন হবে। মেরু অঞ্চলে বরফ গলবে এবং পাহাড়ে পাহাড়ে যে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে, তা গলতেই থাকবে।
বিষাক্ত গ্যাস ও তার পরিণাম : পৃথিবীর এই উষ্ণুতা বৃদ্ধির কারণ কিন্তু আমরাই। আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের যথেচ্ছবিধ্বংসী আবিষ্কার আমাদের পৃথিবীর ‘গ্রিন হাউস গ্যাসকে বাড়িয়ে তুলে পৃথিবীর শ্বাসরােধ করে তুলেছে। এই গ্রিন হাউস গ্যাসে রয়েছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, বিভিন্ন ক্লোরােফ্লুরােকার্বন ইত্যাদি গ্যাস। এরা পৃথিবীর ওপর বিকীর্ণ তাপরশ্মিকে শােষণ করে নেয়, তাদের বেরােতে দেয় না, ফলে ভয়ংকর এক রুদ্ধশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং : ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অরণ্যনিধন-সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটছে, যা পরিবেশে সংকট সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এই উষ্ণতা বৃদ্ধিই গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত।
বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির চরম ক্ষতিকর প্রভাব : পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু প্রদেশের বেশ কিছু অংশের বরফ গলে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমুদ্রে জলস্ফীতি ঘটবে। বিজ্ঞানীদের মতে, এক মিটার সামুদ্রিক জলস্ফীতিতে ভারতের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ১,৭০০ বর্গকিলােমিটার কৃষিক্ষেত্র জলমগ্ন হবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মধ্য আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা আছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ১,১০০ প্রজাতির প্রাণীর চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং বর্তমান শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বের ৭০% পানীয় জলের উৎস প্রায় কোনাে তুষার হিমবাহই আর অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু তাই নয়, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে মেরু প্রদেশের বরফ গলার ফলে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং গােটা সুন্দরবন-সহ ভারতের বেশ কিছু সমুদ্রোপকূল অঞ্চল এবং সম্পূর্ণ মালদ্বীপ সমুদ্রের জলের তলায় চলে যাবে। যার ফলে উদ্বাস্তু হবে পৃথিবীর ১০০ কোটি মানুষ।
উপসংহার : মােট কথা, এই উষ্ণায়ন নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুবই চিন্তিত। নানারকম ভাবনাচিন্তা করে এই বিজ্ঞানীরা পৃথিরীকে এই সংকট থেকে বাঁচাতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশে দেশে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের বসুন্ধরা’ সম্মেলনে তা গৃহীতও হয়েছে। গাছপালা লাগিয়ে গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি যাতে বাতাস দূষিত করতে না-পারে, তা দেখতে হবে। এইভাবে সংযত হতে পারলে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে অনেকাংশে রােধ করা যাবে। এ ছাড়া বিশ্ব সংকটের হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই।
আরো পড়ুন
অরণ্য, অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ ও মানবজীবন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একটি গাছ একটি প্রাণ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
নগরায়ণ বনাম সবুজায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশরক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।