প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা এ পি জে আবদুল কালাম | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
এ পি জে আবদুল কালাম
“যদি তুমি সূর্যের মতো উজ্জ্বল হতে চাও, তাহলে নিজেকে
আগে সূর্যের মতো দগ্ধ করো।” —আবদুল কালাম
ভূমিকা: গত শতকের প্রথমার্ধে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের এক প্রত্যন্ত গ্রামে এক মা তাঁর সাত ছেলেমেয়ের জন্য শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোটো ছেলেটির জন্য তৈরি করতেন কয়েকটা রুটি, যাতে পড়ার সময় তার খিদে না পায়। নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন কেরোসিন তেল, যাতে ছেলেটির রাতের পড়ায় ব্যাঘাত না ঘটে। আর স্বপ্ন দেখতেন যে, তাঁদের বাড়ির কাছে আছে যে বঙ্গোপসাগর, সেই বিশাল সমুদ্রকেও ছাপিয়ে যাবে তাঁর ছেলেটির নামডাক। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ছোটো একটি গ্রামে লালিত সেই স্বপ্নেরই নাম আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম ।
ছেলেবেলা: কালামের জন্ম হয়েছিল রামেশ্বরমের এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। তাঁর বাবা জয়নুল আবদিন ছিলেন একজন সাধারণ মৎস্যজীবী। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে রামেশ্বরম এবং ধনুষকোডির মধ্যে নৌকা পারাপার করেও তিনি অর্থ উপার্জন করতেন। এই অভাবের সংসারে কালামকে স্কুলে পড়ার সময়ে কিছু অর্থ রোজগারের জন্য বাড়ি বাড়ি কাগজ বিক্রি করতে হত।
উচ্চশিক্ষা: রমানাথপুরম ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে বিদ্যালয়শিক্ষা শেষ করে কালাম ভরতি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে স্নাতক হয়ে তিনি যান চেন্নাইয়ে। সেখানে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
কর্মজীবন: ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের অধীনস্থ অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি ভারতের প্রবাদপ্রতিম মহাকাশবিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই, অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একবারই কালাম গিয়েছিলেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আবদুল কালাম যোগ দেন ইসরোতে। প্রথম ভারতীয় মহাকাশ উৎক্ষেপণযান এসএলভি-র প্রকল্প আধিকারিক ছিলেন স্বয়ং কালাম। কৈশোরে বিমানচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখা আবদুল কালাম হয়ে উঠেছিলেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’। ভারত সরকার তাঁর নেতৃত্বেই আশির দশকে সংহত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অগ্নি, পৃথ্বী ইত্যাদি তাঁরই সফল সৃষ্টি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-র সচিব। ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করেছিল যে পোখরান বিস্ফোরণ, তারও মূল কারিগর ছিলেন তিনিই। তাঁর আত্মজীবনী উইংস অফ ফায়ার প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইন্ডিয়া টু থাউজেন্ড টুয়েন্টি (১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ), ইগনাইটেড মাইন্ডস (২০০২ খ্রিস্টাব্দ), মিশন ইন্ডিয়া (২০০৫ খ্রিস্টাব্দ), ইনসপায়ারিং থট্স (২০০৭ খ্রিস্টাব্দ) প্রভৃতি।
রাষ্ট্রপতি কালাম: ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য আবদুল কালাম ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি প্রথা ভেঙে রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা খুলে দিয়েছিলেন সকলের জন্য, বিশেষত বাচ্চাদের জন্য।
শিক্ষক কালাম: শুধু বিজ্ঞানী নন, কালাম ছিলেন আদর্শ শিক্ষকও। তাই রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ করে কালাম ফিরে যান অধ্যাপনায়। শিলং, ইন্দোর এবং আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে তিনি নিয়মিত পড়াতেন। ২০১৫-এর ২৭ জুলাই শিলংয়ের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মঞ্চে বক্তৃতাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন আবদুল কালাম ।
পুরস্কার ও সম্মান: ভারত এবং ভারতের বাইরে চল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি পান। তিনি তাঁর কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৮১), পদ্মবিভূষণ’ (১৯৯০), ‘ভারতরত্ন’ (১৯৯৭) পান ।
উপসংহার: ‘ভারতরত্ন’ কালাম তাঁর বিজ্ঞানসাধনার দ্বারা দেশকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন আত্মবিশ্বাস ও শক্তির শিখরে। তাঁর জীবন দেশবাসীর কাছে হতে পারে চিরন্তন প্রেরণা। “ঘুমের মধ্যে যা আমরা দেখি সেটা স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন সেটাই যা আমাদের জাগিয়ে রাখে।”—জাতিকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে গিয়েছেন আবদুল কালাম ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।